পুরান ঢাকার কারাগার: ৮৬০ দিন থাকেনি কেউ, আজ থাকবেন খালেদা জিয়া

পুরান ঢাকার কারাগার: ৮৬০ দিন থাকেনি কেউ, আজ থাকবেন খালেদা জিয়া

২০১৬ সালের ২৯ জুন। পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের লালদালান খ্যাত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগার থেকে ৬ হাজার ৪০০ বন্দিকে কেরাণীগঞ্জের তেঘরিয়ার রাজেন্দ্রপুরের নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এর মাধ্যমে ২২৮ বছরের পুরনো কারাগার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কেউ কখনো কল্পনাও করেননি কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আর কোনোদিন এ কারাগারে ফের বন্দিজীবন কাটাতে হবে।

কিন্তু ২ বছর ৪ মাস ১০ দিন পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে এই পরিত্যক্ত কারাগারে রাত কাটাবেন বেগম খালেদা জিয়া।

জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার জন্য কারাগারে ভিআইপি বন্দির কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। কক্ষটিতে এয়ারকন্ডিশন ও সোফা সেট দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলীয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। সেইসঙ্গে তার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তৎকালীন মুখ্যসচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকীসহ অন্য আসামিদের ১০ বছরের সশ্রম ও আর্থিক কারাদণ্ড প্রদান করেন।

দুপুর সোয়া ২টায় রায় পাঠের সময় বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের আদালত কক্ষে অবস্থান না করার নির্দেশ দেন বিচারক। রায় পাঠের শুরুতে বিচারক বলেন, ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়টি পুরোপুরি পড়তে গেলে অনেক বিলম্ব হবে। তাই রায়ের মূল পয়েন্টগুলো পড়ে শোনাচ্ছি।

তিনি জানান, মোট ১১টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রায় দেয়া হচ্ছে। রায়ে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তারেক রহমান ও কামালউদ্দিন সিদ্দিকীসহ অন্য আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থ আত্মসাতের সমপরিমাণ টাকা জরিমানা এবং সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হলো।

এ রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিএনপির আইনজীবীরা নো নো, ফলস জাজমেন্ট বলে হৈচৈ করে ওঠেন। তবে রায় শোনার পর বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন ভাবলেশহীন।

সাজাপ্রাপ্ত ঘোষণার সঙ্গেসঙ্গেই আদালতে উপস্থিত পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বিশেষ করে নারী পুলিশ কর্মকর্তারা খালেদা জিয়াকে ঘিরে ফেলেন। তাদের কথামতো বেগম খালেদা জিয়া হেঁটে পাশের কক্ষে চলে যান। এসময় আদালত কক্ষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, মওদুদ আহমদ, মেজর হাফিজউদ্দিন আহমেদসহ অন্য নেতারা মন খারাপ করে চেয়ারে চুপচাপ বসে থাকেন।

দুপুর সোয়া ২টায় বিচারক তার আসনে বসেন। এসময় বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন অনেকটা ভাবলেশহীন। বিচারক দুর্নীতির অভিযোগ পড়া শুরু করলে তিনি কখনো চেয়ারের হাতলে দুহাত রেখে আবার কখনো দুচোখ বন্ধ করে রায় শোনেন। রায়ে পাঁচ বছরের সাজা শোনেও তার মধ্যে কোনো দুঃখ বা ভীতি লক্ষ্য করা যায়নি। তাকে দেখে মনে হয়েছে রায়ে তার সাজা হবে এমন মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই তিনি এসেছেন।

উল্লেখ্য, দণ্ডবিধি ১০৯ ও ৪০৯ ধারায় খালেদা জিয়াসহ বাকিদের এই সাজা দেয়া হয়েছে। বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়ার সাজা কমানো হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি সব আসামিকে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। মোট ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের বিশেষ অংশ পাঠ করেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় খালেদা জিয়া ছাড়া দুই আসামিও উপস্থিত ছিলেন। প্রথমেই বিচারক রায়ের প্রসিকিউশনের অভিযোগগুলো পড়ে শোনান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment